
Yoga for pregnant women,গর্ভাবস্থা নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর যাত্রা, এটি অনেকটা কষ্টের আবার অনেকটা আনন্দের যাত্রা।সময় বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে শেষ কয়েক সপ্তাহ আপনার শরীরে অনেক রকম পরিবর্তন হয় ফলে সমস্যা আরো বাড়তে থাকে বিশেষ করে পিঠে ব্যথা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, ঘুমের সমস্যা।
এই সময়ে বিশেষ কিছু ব্যায়াম করে আপনি শরীরকে কিছুটা কষ্ট মুক্ত করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এই সাহায্যকারী ব্যায়ামগুলো শুধুমাত্র আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে তা নয়, এগুলো আপনার শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শ্রোণীর (পেলভিস) পেশী এবং লিগামেন্টগুলিকে কম পরিশ্রমে প্রসব করায় সাহায্য করে।
প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।যোগব্যায়ামের সামগ্রিক পদ্ধতি এটিকে গর্ভবতী মেয়ের গর্ভাবস্থা সহজ করে তোলে । সুতরাং, শ্রম এবং প্রসব সহজ এবং সময়মত করতে এখানে কিছু ব্যায়াম দেওয়া হলো:
Table of Contents
Toggleহাঁটা:
গর্ভাবস্থায় সক্রিয় এবং সুস্থ থাকার একটি দুর্দান্ত উপায় হলো নিয়মিত হাঁটা। এটি শুধুমাত্র আপনার সামগ্রিক ফিটনেসই বাড়াবে না, এটি নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করবে। হাঁটা পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে । পাশাপাশি পেলভিক ফ্লোর পেশীগুলিকে নমনীয় করে তোলে। আপনাকে শান্ত রাখবে এবং উদ্বেগ প্রতিরোধ করবে।এটি কঠোরভাবে না করে আপনার নিজের গতিতে করুন।
স্কোয়াটস:
স্কোয়াটিং হলো গর্ভাবস্থায় করা শরীরের অন্যতম একটি স্বাভাবিক মুভমেন্ট। গর্ভাবস্থায় করা যায় এমন সবচেয়ে নিরাপদ ব্যায়ামগুলির মধ্যে এটি একটি। গর্ভাবস্থায়, স্কোয়াটগুলি সম্পাদন করা বিশেষত উপকারী ।কারণ এটি পেলভিক অঞ্চলকে সংকুচিত করতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করে, সম্ভাব্যভাবে প্রসবের সাথে সম্পর্কিত ব্যথা এবং অস্বস্তি হ্রাস করে। স্কোয়াটগুলি শিশুকে সঠিক অবস্থান নিতে সাহায্য করে।অতএব, যখনই সম্ভব অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য এটি করুন।
নিয়ম:প্রথমে আপনার পাগুলোকে পাছার চেয়ে সামান্য ছড়িয়ে দাঁড়ান এবং পায়ের আঙ্গুলগুলিকে সামনের দিকে রাখুন এরপর আপনার পিঠ সোজা রেখে, এমনভাবে নিচের দিকে নামুন যেন মনে হয় আপনি কোনো চেয়ারে বসতে চলেছেন। আপনি ফুল স্কোয়াট অথবা হাফ স্কোয়াট দুটোই করতে পারেন।
ফুল স্কোয়াট করার ক্ষেত্রে আপনি চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে পায়ের উপর ভর দিয়ে সম্পূর্ণ নিচে বসে যান অন্যদিকে হাফ স্কোয়াটে আপনার পিঠের নিচের অংশটি যেন আপনার হাঁটুর নিচে না যায়। একবার গভীর শ্বাস নিন তারপর 5 বা 10 সেকেন্ড ধরে এই পজিশনে থাকুন এরপর সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
প্রজাপতি ভঙ্গি বা বাটারফ্লাইজ:
প্রজাপতি ভঙ্গি বা বাটারফ্লাইজ হল একটি জনপ্রিয় আসন যা মহিলাদের জন্য ভীষণ উপকারী, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ।বাটারফ্লাইজ হলো একটি সহজ ব্যায়াম এবং এই ব্যায়ামটি আপনি গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে সন্তান প্রসব করার সময় পর্যন্ত করতে পারেন।
এটি আপনার শ্রোণীকে (পেলভিস) খুলে দেয় এবং এটি পিঠের ও উরুর পেশীগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পেশীগুলিকে নমনীয় করে তোলে। এটি উত্তেজনা হ্রাস করে । এই বাটারফ্লাই পোজকে বাউন্ড অ্যাঙ্গেল পোজ বা মুচি পোজও বলা হয়।
নিয়ম:মেঝেতে সোজা হয়ে বসুন এবং আপনার পায়ের পাতাগুলির নিচের দিক একটার সাথে আরেকটা লাগিয়ে রাখুন। এরপর দুটো হাতদিয়ে পায়ের পাতা দুটিকে মুঠো করে চেপে ধরুন এবং প্রজাপতির ডানার মতো আপনার পা দুটোকে উপরে এবং নীচের দিকে নাড়তে থাকুন এবং আপনার উরুর পেশীগুলি যে প্রসারিত হচ্ছে সেটা অনুভব করুন। আপনি ব্যায়ামটি ততটাই স্পিডে করুন যতটা স্পিডে করলে আপনি আরাম বোধ করেন।
গর্ভাবস্থায় কেগেলস ব্যায়াম:
কেগেলস ব্যায়াম হল এমন একধরনের ব্যায়াম যেখানে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে পেলভিসের পেশী সংকুচিত করেন।এটি হল এক ধরনের পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম যাতে মূত্রাশয়, জরায়ু এবং মলদ্বার সমর্থনকারী পেশীগুলিকে সংকুচিত করে এবং শিথিল করে।
গর্ভাবস্থায়, কেগেলস ব্যায়াম করা বিশেষভাবে উপকারী কারণ এটি পেলভিক ফ্লোর পেশীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং প্রসবের সময় এবং প্রসবের পরে প্রস্রাবের অসংযম এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে।
এছাড়া এটা প্রসবের সময় শিশুকে বাইরের দিকে ধাক্কা দিতে (পুশিং) সাহায্য করে।এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরের পেশীগুলিকে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য শক্ত করে সংকোচন করুন, পাঁচ সেকেন্ড সেগুলিকে সংকুচিত অবস্থায় ধরে রাখুন এবং পাঁচ গোনার সাথে সাথে ছেড়ে দিন। দিনে 10 থেকে 15 বার এই ব্যায়ামটি করুন।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা:
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা প্রাকৃতিকভাবে প্রসবের ক্ষেত্রে ভীষণ সাহায্য করে।সিঁড়ি বেয়ে ওঠার জন্য পিঠের নিচের অংশের এবং পায়ের সমস্ত পেশীকে ব্যবহার করতে হয়। পাছার (হিপ) প্রসারণ এবং নড়াচড়া (মুভমেন্ট) গর্ভে থাকা শিশুর মাথাকে জন্ম নালীর নিচের দিকে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে প্রসবের সময় হওয়া শারীরিক পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত করে। এটি জরায়ুর মুখের (সার্ভিক্স) উপর চাপ দেয়, এরফলে জরায়ুর মুখ প্রসারিত হয় এবং শ্রোণী অঞ্চলটিকে খুলে দেয়।
সহজ শ্রম এবং প্রসবের জন্য জন্মপূর্ব যোগব্যায়াম:
যোগব্যায়াম মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই সেরা ব্যায়াম। গর্ভাবস্থাই বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের জন্য মানসিক চাপ বাড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় যোগব্যায়াম এইসব সমস্যা কমাতে সাহায্য করে, শিথিল হতে সাহায্য করে এবং মনকে শান্ত রাখে।
বিঃ দ্রঃ উপরিউক্তব্যায়াম গুলোকে অনুসরণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন