
ঐতিহ্য ভ্রমণ আসলে মানুষের নিজেদের অতীত সম্পর্কে জানার আরেকনাম ।পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম একটি রাজ্য যার চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
শুধু স্থাপত্যের বিষয় নয়, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী অনুশীলন, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের একটি সুন্দর মিশ্রণ রয়েছে এই রাজ্যে। যা ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।এখানে সেরকম কিছু ঐতিহাসিক স্থানের সাথে পরিচিত হব
1.দক্ষিণেশ্বর মন্দির
2.বেলুড় মঠ
3.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
4.আলিপুর চিড়িয়াখানা
Table of Contents
Toggleদক্ষিণেশ্বর মন্দির:
কলকাতার অদূরে হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। এটি একটি হিন্দু নবরত্ন মন্দির।এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে কালী দেবীর মন্দিরের জন্য বিখ্যাত, ১৮৫৫ সালের ৩১মে স্নান যাত্রার দিন প্রসিদ্ধ মানব দরদি জমিদার রানি রাসমণি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।কথিত আছে, রানি রাসমণি দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
এই মন্দিরে দেবী “ভবতারিণী” ,পরাশক্তি আদ্য কালীর একটি রূপ, অন্যথায় আদিশক্তি কালিকা নামে পরিচিত। নামে পূজা করা হয়। স্থানীয়ভাবে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি,মা ভবতারিনী মন্দির নামে পরিচিত।ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট যোগী রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরে কালীসাধনা করতেন।দর্শনের সময় প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে দুপুর 12:30 এবং বিকাল 3:30 থেকে রাত 8:30 পর্যন্ত।

বেলুড় মঠ:
বেলুড় মঠ হল রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়, যা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান এবং প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন।১৬ মার্চ, ১৯৩৫ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। প্রখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার ও শিল্পপতি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।মার্টিন বার্ন অ্যান্ড কোম্পানি এই বিরাট মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
এটি ভারতের হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে বেলুড়ে অবস্থিত এবং এটি কলকাতার উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের উপযোগি ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থল। মন্দিরটি হল রামকৃষ্ণ আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। বেলুড় মঠ তার স্থাপত্যের জন্য উল্লেখযোগ্য ।রামকৃষ্ণ মিশন এই মন্দিরের বর্ণনা দেন “স্থাপত্যের ঐকতান” রূপে। এটি হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সকল ধর্মের ঐক্যের প্রতীক।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল:
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় অবস্থিত,রানি ভিক্টোরিয়ার একটি স্মৃতিসৌধ। উল্লেখ্য, ভিক্টোরিয়া ভারতের সম্রাজ্ঞী উপাধির অধিকারী ছিলেন।এই দুধ সাদা সৌধটি সবুজ বাগান দ্বারা বেষ্টিত, যা কলকাতার একটি প্রধান পর্যটক আকর্ষণ। এটি 64 একর বাগানে দাঁড়িয়ে আছে এটি ভারত সরকার দ্বারা 1906 এবং 1921 সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল ।
এটি 1876 থেকে 1901 সাল পর্যন্ত ভারতের সম্রাজ্ঞী রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত ।এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধটি রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছিল। ভাইসরয় লর্ড কার্জন এই সৌধটির পরিকল্পনা করেছিলেন আর এই পরিকল্পনা সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন স্যার উইলিয়াম এমারসন।
এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে সাদা মাকরানা মার্বেল ব্যবহার করায় এটি আরও সুন্দর ও মোহময় হয়ে উঠেছে । প্রাসাদের অভ্যন্তর, মিউজিয়ামটি চিত্রকর্ম, মুদ্রা, মানচিত্র, অস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিসে সমৃদ্ধ।এখন এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি জাদুঘর ।

আলিপুর চিড়িয়াখানা:
আলিপুর পশুশালা ভারতের প্রাচীনতম বিধিবদ্ধ চিড়িয়াখানা এবং কলকাতার একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। ১৮৭৬ সালে এই চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার রিচার্ড টেম্পল , বাংলার লেফটেন্যান্ট-গভর্নর চিড়িয়াখানা গঠনের প্রস্তাব করেন এবং চিড়িয়াখানার জন্য জমি বরাদ্দ করেন।
এই চিড়িয়াখানার আয়তন ৪৫ একর। এটি অধুনা-মৃত অদ্বৈত নামক একটি অ্যালডাব্রা দৈত্যাকার কচ্চপের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। যে কচ্ছপটি 2006 সালে মারা যায়।মৃত্যুকালে এই কচ্ছপটির বয়স ছিল ২৫০ বছরেরও বেশি। এখানে বিভিন্ন পশু যেমন-বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি দেখা যায় পাশাপাশি বিভিন্ন পাখি
যেমন- কিং ফিশার, পেইন্টেড স্টর্ক, নাইট হেরন, ইগ্রেটস, লিটল করমোরেন্ট, টিল, স্প্যারো।সাধারণ ময়না, ঘুঘু, প্যারাকিট, বাজপাখি ইত্যাদি
